আমাদের ছোট নদী কবিতা (amader choto nodi kobita) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি সুন্দর গ্রাম্য কবিতা যা গ্রামের ছোট নদীর স্বাভাবিক দৃশ্য ও জীবনের ছবি তুলে ধরে। কবিতাটিতে নদীর বাঁকে বাঁকে চলা, বৈশাখ মাসে জল বৃদ্ধির দৃশ্য, গ্রামের ছেলেমেয়েদের ক্রীড়া, মাছ ধরা, বধূদের গৃহকাজ এবং বর্ষার উৎসবের চিত্রায়ন করা হয়েছে। কবিতাটি গ্রামীণ জীবনের ঐশ্বর্য এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলনের সুন্দর উদাহরণ।
এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এবং স্কুলের পাঠ্যসূচীেও অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে পাঠকের মনে গ্রামীণ জীবনের সুন্দর অনুভূতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের ঐক্যের প্রশংসা উঠে আসে।
আমাদের ছোট নদী
আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে।
বৈশাখ মাসেতার হাটু জল থাকে
পার হয়ে যায় গোরু পার হয় গাড়ি
দুই ধার উঁচু তাঁর ঢালু তার পাড়ি।
বৈশাখ মাসেতার হাটু জল থাকে
পার হয়ে যায় গোরু পার হয় গাড়ি
দুই ধার উঁচু তাঁর ঢালু তার পাড়ি।
চিক চিক করে বালি কোথাও নেই কাদা
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক৷
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক৷
আর পারে আমবন তালবন চলে।
গাঁয়ের মানুন পাড়া তারি ছায়াথলে,
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
গাঁয়ের মানুন পাড়া তারি ছায়াথলে,
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।
আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়ে চলে ধারা খরতর ।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে
দুই কোলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া
বর্ষার উৎসব জেগে ওঠে পাড়া৷
মাতিয়া ছুটিয়ে চলে ধারা খরতর ।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে
দুই কোলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া
বর্ষার উৎসব জেগে ওঠে পাড়া৷
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর