ছোট বেলায় আমরা প্রায় সময়ই বড়োদের কাছ থেকে বুদ্ধির ধাঁধা উত্তর সহ (Bengali Riddle) শুনতাম। বিদ্যালয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে ধাঁধার প্রতিযোগিতাও হতো। ধাঁধা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় ও আমাদের স্মৃতিশক্তি/চিন্তাশক্তিকে মজবুত করে৷
ধাঁধা (dha dha bengali) শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে কৌতূহল জাগে। এটি এমন এক ধরনের শব্দ খেলা, যা মানুষকে চিন্তা করতে বাধ্য করে। বাংলার লোক সংস্কৃতিতে ধাঁধার রয়েছে এক বিশেষ স্থান। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষরা ধাঁধার মাধ্যমে বুদ্ধির চর্চা করতেন এবং শিশুদের শেখানোর মাধ্যম হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতো। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা ধাঁধার ইতিহাস, গুরুত্ব এবং কিছু মজার ধাঁধা নিয়ে আলোচনা করব।
ধাঁধার সংজ্ঞা ও ইতিহাস
ধাঁধা হলো এমন এক ধরনের রহস্যময় প্রশ্ন বা উক্তি, যা লুকায়িত অর্থ বোঝার জন্য মস্তিষ্ককে সক্রিয়ভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে। সাধারণত ধাঁধার উত্তর সরাসরি বলা হয় না; বরং চিন্তা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বের করতে হয়।
বাংলা ধাঁধার ইতিহাস বহু পুরোনো। একসময় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা শিশুদের ধাঁধার মাধ্যমে শিক্ষাদানের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করতেন। সাহিত্যেও ধাঁধার গুরুত্ব অপরিসীম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্য অনেক সাহিত্যিক তাঁদের লেখায় ধাঁধার ব্যবহার করেছেন।
ধাঁধার গুরুত্ব ও উপকারিতা
ধাঁধা শুধু মজার খেলা নয়, এটি বুদ্ধির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে ধাঁধার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
1. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: ধাঁধা সমাধান করতে হলে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন হয়, যা মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়ায়।
2. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: ধাঁধার উত্তর খুঁজতে গেলে সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটে।
3. মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়: ধাঁধা মনে রাখার প্রবণতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
4. মনোযোগ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ধাঁধা সমাধানের জন্য মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি, যা বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
5. শিক্ষণীয় দিক: অনেক ধাঁধার মাধ্যমে ভাষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির নানা বিষয় শেখা যায়।
জনপ্রিয় বাংলা ধাঁধা ও সমাধান
এখন চলুন কিছু মজার বাংলা ধাঁধা দেখা যাক!
ধাঁধা উত্তর সহ
 দুধ সাদা, তুলো সাদা
আর সাদা কে?
জলে নেমে হেঁটে হেঁটে
মাছ খোঁজে যে।
বক
 আমি  যাকে মামা বলি়,
বাবাও বলে তাই।
ছেলেও তাকে মামা বলে,
মাও বলে তাই।
চাঁদ
মেঘের ডাকে জল ছেড়ে, ডাঙায় উঠে পড়ে, মানুষ তার মাঠে পেলে , নিয়ে যায় ঘরে।
কইমাছ
তিন অক্ষরে জিনিসটা কি নাম তার বলনা মাথা কাটলে চলে আর মাথা না কাটলে চলে না।
পেন্সিল
তেল চক চক পাতা, ফলের ওপর কাঁটা, পাকলে হয় মধুর মত , দানা গোটা গোটা।
কাঠাল
কোন রাণী পুরুষও হয়?
কেরানী
আপনার কোন জিনিসটি অন্যরা সর্বদা ব্যবহার করে?
নাম
কোন প্রশ্নের উত্তরে কখনো হ্যাঁ বলা যায়না?
তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ?
৫ মিনিটের রাস্তা যেতে এক ঘন্টা সময় নেয় কে ?
ঘন্টার কাঁটা।
টিয়া,পায়রা, শালিক, ময়না, চড়ুই এগুলোর মধ্যে কোনটি ডাকার নিরিখে আলাদা ?
পায়রা। সব গুলিতেই আমরা পাখি কথাটি বলে থাকি। পায়রা তে পাখি বলি না।
তেরোর থেকে তেরো বাদ দিলে কি থাকে ?
তেরোর - তেরো = র
পদবি এবং বন্য জন্তু একই সাথে। সেই পদবি বা জন্তুর নাম কি হবে?
পান্ডা
জল, জল, জল চারদিকে জল। তবুও খাওয়ার জন্য নেই এতটুকু জল। বলো দেখি বলো এ কেমন জল?
খেতে বড়ো সুখ, সারা গায়ে চোখ।
উড়লেও পাখি নয়, বলো দেখি কারে কয়?
একটা ঘরে একটাই থাম, বলো দেখি তার কী নাম?
    কাঁচাতে যেই ফল সর্বজনে খায়,
    পাঁকলে সেই ফল গড়াগড়ি যায়
  
    জল ছাড়া নদী, পাথর ছাড়া পাহাড় 
    এবং মানুষ ছাড়া শহর কোথায় পাওয়া যায়?
  
    জল ছাড়া নদী, পাথর ছাড়া পাহাড় 
    এবং মানুষ ছাড়া শহর কোথায় পাওয়া যায়?
  
    যদি থাকে বুদ্ধি বলো দেখি 
    কোন সুখে সুখ নেই?
  
কোন বরকে সবাই চায়?
    আপনি তাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবেন,
    আর ধরতে না পারলে
    সে আপনার সঙ্গে থাকবে।
  
    হাসিতে হাসিতে যায় নারী,
    পর পুরুষের কাছে,
    যাইবার সময় কান্নাকাটি,
    ভিতরে গেলে হাসে।
  
বুদ্ধির ধাঁধা উত্তর সহ
    কালিদাস পন্ডিতের ফাঁকি, 
    আড়াইশো থেকে পাঁচ পঞ্চাশ গেলে
    আর কত থাকে বাকী?
  
    বাঘের মত লাফ দেয়, কুকুর হয়ে বসে,
    পানির মধ্যে ছেড়ে দিলে, ছোলা হয়ে ভাসে।
  
    একটা ঘড়ির উপর দিয়ে একটা
    ঘোড়া চলে গেল, ঘড়িটির কটা বাজবে বলো।
  
    শহর থেকে এল সাহেব কোর্ট প্যান্ট পরে,
    কোর্ট প্যান্ট খোলার পরে চোখ জ্বালা করে।
  
    ছোটো বেলায় বস্ত্রধারী, যৌবনে উলঙ্গ,
    বৃদ্বকালে জটাধারী, মাঝখানে সুড়ঙ্গ।
  
LLAC দিয়ে কারো সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবেন ?
     ৩ অক্ষরের নাম তার 
    পেট ভরে পানি খায় 
    মাঝের অক্ষর বাদ দিলে 
    আলোয় ভরে যায়,
  
     কান নাই মাথা নাই,
    পেট ভরে খায়, 
    কাম নাই কাজ নাই, 
    মাথা নিয়ে ঘুমায়।
  
    আমি কাদাঁই, আমি হাসাই, 
    নই আমি প্রাণি, 
    আমায় দেখে সবাই 
    ক্ষনিক ভোলে ব্যাথার বানী।
  
    আন্ধার ঘরে থাকি আমি নড়াচড়া করি, 
    একটুখানি খাবার পেলে খাবলে তাকে ধরি।
  
    হাঁড়ির ভিতর, বালির ভিতর 
    হাজার ছেলে নাচে, 
    একটু পরই হয় সে খাবার 
    তপ্ত চুলার আঁচে।
  
    এতো বড় আঙিনা
    ঝাড় দিয়েও কুলোয় না।
    কতো ফুল ফুটে আছে
    নাই তার তুলনা!
  
    ব্যবহার করার জন্য
    কোন জিনিসটাকে ভাঙতেই হবে?
  
    চার পায়ে বসি মোরা,
    আট পায়ে চলি।
    বাঘও নই ভাল্লুকও নই
    আস্ত কাঁধে ঝুলি।
  
    ডানা আছে, লেজ আছে তবুও
    আকাশে উড়তে পারে না
  
    তিন অক্ষরে নাম তার
    সর্ব অঙ্গে কালো,
    মাঝের অক্ষর বাদ দিলে
    খেতে লাগে ভাল
  
    আশ্চর্য এক কথা
    শুনলে হাসি পায়
    নিজে দেখতে পায় না
    কিন্তু অপরকে দেখায়।
  
    তিন অক্ষরের নাম তার সবাই খায়,
    প্রথম অক্ষর ছেড়ে দিলে
    মেয়েদের হাতে যায়।
  
হাসির ধাঁধা উত্তর সহ
    বৃদ্ধ হলে ছোট হয়,
    ছোট হলে বড় হয়।
  
    চোখ আছে, কান নাই,
    হাত আছে, প্রাণ নাই।
  
    এক বাড়িতে চার ভাই,
    তাদের গায়ে একই সাজ,
    কারো মুখে কেশ নাই,
    দিন শেষে বাড়ায় রাজ।
  
    এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে,
    হাত দিয়ে ঠেলে দিলে,
    দৌড়ে পালিয়ে যায়।
  
    সাদা দুটি পুকুরে
    কালো হিরে
    চকচক করে।
  
    দিনের বেলায় ঘুমিয়ে থাকে
    রাতের বেলায় জাগে
    ঘর-বাড়ি নেই আকাশেতে থাকে
  
    চাঁদ নয় সূর্য নয়
    আলো দেয় রাতে
    গাছে গাছে উড়ে বেড়ায়
    টিমটিম আলোতে।
  
    গলা আছে মাথা নেই
    হাত আছে পা নেই
    এটি কি বলবে আমায়?
  
    বাঘ নয় তবে মানুষ খায়
    পাখি নয় তবে উড়ে যায়
    বোলতা নয় তবে শুং আছে
    জন্তু নয় তবে পা আছে।
  
    মাথার উপর রাখে আমায় রোদ-বর্ষার দিনে
    বাকি সময় পড়ে থাকি শুধু ঘরের কোনে৷
  
    জবা লাল, আপেল লাল আর লাল কী?
    পূব আকাশে চেয়ে দেখো লাল ওটি কী?
  
    দাদু বুড়ো, ঠাকুমা বুড়ি আমাতে বুড়ো কী?
    পাঁচ আঙুলে রয়েছে সেটি বলবে সেটি কী?
  
    উপরে থেকে পড়ল হাঁড়ি
    হাঁড়ির ভেতরে একশো কড়ি।
  
    ঘরের ভেতরে ঘর
    সেখানে গিয়ে শুয়ে পড়।
  
চিন্তার ধাঁধা উত্তর সহ
    এক থালা সুপারি
    গুণতে না পারি।
  
    জটা ভরা মাথায়
    হাজার চোখে তাকায়।
  
    থাকি গভীর জলে
    মাঝের বর্ণ ছেড়ে দিলে
    আকাশে যাই উড়ে।
  
    প্রজাপতি, প্রজাপতি বলছি শোন কী
    তিনটি মাথা, দশটি ঠ্যাং দেখেছ তুমি কি?
  
    লেবু টক, জলপাই টক
    আর টক কী
    পাতার আড়ালে ঝুলে থাকি
    আমায় চেন কি?
  
    লম্বা কেশর ফুলিয়ে তোলা
    গম্ভীর মেজাজ;
    রাজার মতো চেহারা তাই
    নামটি পশুরাজ
  
    আয় আয় তু তু
    খেতে দেব দু দু!
    ল্যজটি তুলে
    নাচবি সুখে,
    হাসবে সোনার খুকু!
  
    গাছে হয়
    ঘরে আনি
    রান্না হয়
    খাওয়ার সময় ফেলা হয় ।
  
    পাখা আছে মোর
    না পারি উড়তে,
    আঁখি আছে মোর
    না পারি মুদতে।
    পা নাই মোর
    তবুও ঘুরি।
    জীবন কাটাই
    জলে চরি।
    যদি তুমি আমায় চিনতে পারো
    তবে মোর নামটি মনে করো।
  
পাখা নেই মোর শূন্যেতে বেড়াই
    দেখলে তা পায় না,
    পেলে কিন্তু দেখে না।
  
    একটা শোল মাছের দুটো মাথা,
    শোল মাছ চলে গেল কলকাতা
  
    গাছের ওপর ফল
    ফলের ওপর গাছ
    কে আমি বলো
    না ভেবে আগ-পাছ।
  
    তিন বর্ণের নামটি আমার
    আরাম করে শুই
    প্রথম বর্ণ কেটে দিলে
    দুধের থেকে হই
    মাঝের বর্ণ কেটে দিলে
    ছাড়া পেয়ে যাই
    শেষের বর্ণ কেটে দিলে
    ভীষণ ভয় পাই।
  
    দুই বর্ণের শব্দ আমি
    জলের মাঝে রই
    দ্বিতীয় বর্ণ কাটলে পরে
    আপন আমি হই।
  
    ফরসা সাহেবেরা কালো টুপি পরে,
    একবার ঘসে দিলে উঠে যে জ্বলে
  
    বড়ো একটি পুকুরের ছোটো দুটি ঘাট,
    বত্রিশটি কলাগাছ, একটি পাতা তাতে ৷
  
ধাঁধার জনপ্রিয়তা ও আধুনিক যুগে প্রভাব
প্রযুক্তির যুগে ধাঁধার প্রচলন কিছুটা কমে গেলেও, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন কুইজের মাধ্যমে এটি নতুনভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধাঁধা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, যা শিশুদের সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ধাঁধা কেবল বিনোদনের একটি মাধ্যম নয়, এটি বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর অসাধারণ একটি উপায়। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধাঁধাগুলো আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অংশ। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে এই মজার ও শিক্ষণীয় খেলাকে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের সবার।


