শব্দ ভাণ্ডার | SEBA Class 9 & 10 Bangla Grammar Assam

ডেইলি বরাক
By -
বাংলা ব্যাকরণ | SEBA Class 9 & 10 Bangla Grammar Assam | SEBA Bangla Grammar Assam


ভাষার প্রধান সম্পদ শব্দভাণ্ডার। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত সমৃদ্ধ সে ভাষা ততই শব্দশক্তিতে উন্নত। এই শব্দশক্তির প্রধান উৎস দুইটি – ধাতু ও শব্দে প্রত্যয় যোগ করিয়া নূতন শব্দ গঠন এবং অন্যান্য ভাষাসমূহ হইতে শব্দ গ্রহণ । বাংলা শব্দ প্রধানত দুই জাতির, মৌলিক এবং আগন্তুক। মৌলিক শব্দগুলি ভারতীয় যা হইতে গৃহীত । আর আগন্তুক শব্দ অষ্ট্রিক, দ্রাবিড়, সেমীয় ইত্যাদি অসম্পৃক্ত গোষ্ঠীর ভাষা অথবা ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর শাখান্তর হইতে লওয়া। মৌলিক শব্দের তিনটি বিভাগ-
(১) তত্ব, (২) তৎসম, (৩) অর্ধ-তৎসম।

তদ্ভব : যে শব্দ আদি ভারতীয় আর্য (সংস্কৃত) হইতে মধ্য ভারতীয় আর্যের (প্রাকৃত) ভিতর
দিয়া ধারাবাহিক পরিবর্তন লাভ করিয়া আসিয়া বাংলা রূপ লাভ করিয়াছে সেগুলি তত্তব শব্দ (তৎ, মূলস্থানীয় সংস্কৃত ভাষা হইতে যাহার ভব অর্থাৎ উৎপত্তি)। বাংলা শব্দভাণ্ডারের তদ্ভব শব্দই সর্বাধিক। যথাং যোড়শ > সোলহ > যোল, ইন্দ্রাগার > ইন্দাগার > ইদারাঁ; ধর্ম > ধর্ম > ধাম; কর্ণ > কণ্ণ কোণ।

তৎসম : যে সকল শব্দ সংস্কৃত হইতে অপরিবর্তিতরূপে আধুনিক বাংলা ভাষায় গৃহীত হইয়াছে তাহাকে তৎসম শব্দ বলে (তৎ, অর্থাৎ সংস্কৃতের ‘সম’ অর্থাৎ মান)। যেমন, জল, বায়ু, আকাশ, প্রকৃতি, অন্ন

অর্ধতৎসম : যে সকল শব্দ এক সময় সংস্কৃত হইতে অবিকৃতভাবে গৃহীত হইয়াছিল এবং
যেগুলিতে পরবর্তী কালোছিত ধ্বনি পরিবর্তনে সাধিত হইয়াছে এইসকল শব্দকে বলা হয় অর্ধ তৎসম অর্থাৎ কিঞ্চিৎদভিন্নমূর্তি। যথা – চিত্র > চিত্তির; মিত্র > মিত্তির; গ্রাম > গেরাম; শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ। অনেক সময় দেখা যায় যে একই শব্দের তত্ভব ও অর্ধ-তৎসম দুই-ই-চলে। যথা, শ্রদ্ধা > সাধ, ছেদ্দা; ক্ষুদ্র >
খুদ, খুড়া। বাংলায় আগন্তক শব্দ প্রধানত দুই শ্রেণির-দেশী ও বিদেশী

দেশী : বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলি শব্দ পাওয়া যায় যাহাদের মূল প্রতিরূপ সংস্কৃতে পাওয়া যায় না। এই শব্দগুলি দ্রাবিড় এবং কোল ভাষা হইতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করিয়াছে। ইহাদের বলা হয় দেশী শব্দ। যেমন- ডাব, ডিঙ্গি, ঢোল, বিঙ্গা, ঢেউ ইত্যাদি।

বিদেশী : বাংলা ভাষায় নানা বিদেশী জাতির ভাষা হইতে শব্দ গ্রহণ করা হইয়াছে, এইগুলিকে বিদেশী শব্দ বলে।

ফারসী -আন্দাজ, খরচ, কম, বেশি, জাহাজ, পয়লা, বস্তা ইত্যাদি।

আরবী = (ফরাসীর মাধ্যমে) আইন, আক্কেল, বিদায়, আতর, কেতাব, দফা ইত্যাদি

তুর্কী = (ফরাসীর মধ্য দিয়া) আলখাল্লা, উজবুক্‌, উদু (শিবির),কুলি, চাকু, বিবি, কাঁচি ইত্যাদি।

পুর্তুগীজ = আলকাতরা, আলপিন, আনারস, আলমারী, বালতি, গাম্লা ইত্যাদি।

ওলন্দাজ = হরতন, তুরুপ, রুইতন,  ইস্ক্রুপ ইত্যাদি।

ফরাসী = কার্তুজ, কুপন, রেস্তোরাঁ, বুরুশ, বুর্জোয়া প্রভৃতি।

ইংরেজি = চেয়ার, টেবিল, কাপ, স্কুল, কলেজ, অফিচ, মাষ্টার, বল প্রভৃতি। 

চীনা = লুচি, চিনি, চা প্রভৃতি।

অষ্ট্রেলিয়া = ক্যাঙারু প্রভৃতি।

পেরু =  কুইনাইন প্রভৃতি।

জাপানী = যুযুৎসু, হারাকিরি, রিক্সা প্রভৃতি।

বর্মা = লামা, লুঙি প্রভৃতি।

আফ্রিকীয় = জেব্রা।

মিশ্র : বিভিন্ন ভায়ার শব্দ কিন্বা প্রত্যয়ের মিশ্রণে যে সকল শব্দ গঠিত হয় তাহাকে মিশ্র শব্দ বলা হয়। বাংলা ভাষায় এইরূপ প্রচুর মিশ্রশব্দ প্রচলিত আছে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল। যথাং

মাষ্টার মশাই = মাস্টার (ইংরাজী) + মশাই (তদ্ভব)

লজ্জাশরম = লজ্জা (তৎসম) + শরম (ফার্সী)

হাটবাজার = হাট (তদ্ভব) + বাজার (ফার্সী)

ধ্বন্যাত্মক শব্দঃ কতকগুলি অর্থহীন ধ্বনির সমবায়ে বাংলা ভাষায় অসংখ্য অর্থপূর্ণ শব্দের সৃষ্টি হইয়াছে। বিশেষ রকম ধ্বনিই এই সকল শব্দের প্রাণ বলিয়া শব্দগুলিকে ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। এই জাতীয় শব্দের সাহায্যে বিচিত্র রকমের ভাব সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করা যায়। নিশ্নে কয়েকটি উদাহরণ
দেওয়া হইল।  যথা
খট্‌খটে, তুলতুলে, ঢলঢলে, শোঁশো, খিলখিল্, গিজ্গিজ্‌, ধেইধেই, ঝরঝর প্রভৃতি।

দ্বিরুক্ত শব্দ বা শব্দদ্বৈত : দ্বিরুক্ত শব্দ বা শব্দদ্বৈতের অর্থ হইতেছে একক শব্দের স্থানে জোড়া শব্দের ব্যবহার। এই শব্দদ্বৈত দ্বন্দ সমাসের পর্যায়ভুক্ত হয়। শব্দদ্বৈত তিন রকমের গঠিত হয়।

(১) একই শব্দের পুনরাবৃত্তিযোগে, যেমন – চোখে, শীত – শীত

(ক) রামবাবু মেয়েটিকে সব সময় চোখে চোখে রাখেন।
(খ) আমার শীত শীত করছে।

(২) একই শব্দের সহিত সমার্থক, অপর এক শব্দযোগে -গা – গতর, জন- মানব।

(ক) গতকাল পাহাড়ে উঠে আমার গা-গতর ব্যথা করছে।
(খ) স্থানটি জনমানব শূন্য।

(৩) অনুকার বা বিকারজাত শব্দযোগে – ঝনঝন শব্দে বাসনগুলি পড়িয়া গেল।

টন্ টন্ – পা- টা ব্যাথায় টন্ টন্ করছে। 



(ক) মৌলিক শব্দ : যে শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না এবং যাহার প্রকাশিত অর্থই চরম; তাহাকে বলা হয় মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দ। ইহার অপর নাম প্রকৃতি । যখন কোনও দ্রব্য, জাতি, গুণ বা অপর পদার্থ ইহার দ্বারা দ্যোতিত হয় তখন ইহাকে নাম প্রকৃতি বা সংজ্ঞা প্রকৃতি বলা হয়। যেমন- ভাই, নদী, হাত, দিন, পাহাড় প্রভৃতি ৷ অর্থসম্পন্ন অথচ বিভক্তিহীন নাম প্রকৃতিকে প্রাতিপদিক বলে। যথা-লতা, পাতা, ফল, জল, পাখি। পক্ষান্তরে প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ ভাঙ্গিলে মৌলিক ভাবব্যঞ্জক যে অংশটুকু কোন দ্রব্য, জাতি, বা গুণ না বুঝাইয়া কোনও রকমের ক্রিয়া বুঝায় তাহারই নাম ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু প্রকৃতি বা ধাতু। যেমন, রাখ্‌, গাহ, খা, চল্‌ ইত্যাদি

(খ) সাধিত শব্দ : যে শব্দকে ভাঙ্গা যায় এবং ভাঙ্গিয়া যে শব্দের পূর্ণ অর্থ বুঝিতে পারা যায় তাহাকে বলা হয় সাধিত শব্দ। শব্দ দুই জাতের- প্রত্যয় নিষ্পন্ন বা সমস্ত পদ। একটি শব্দ ভাঙ্গিয়া যদি একটি অংশ মৌলিক ভাব ও অপর অংশে ঐ মৌলিক ভাবেরই প্রসারণ, সংকোচন এবং অপরাপর পরিবর্তন নির্দেশক আর একটি অংশ – যাহার নাম প্রত্যয় থাকে তাহা হইলে সেই শব্দকে বলে প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ। যেমন-দৃশ + অনট(কৃৎ) = দর্শন (কৃৎ) রাখ + আল – রাখাল (কৃৎ) এবং বাক্স +বন্দ প্রসারে বন্দী = বাক্সবন্দী (তদ্ধিত)। যে শব্দ ভাঙ্গিলে একাধিক মৌলিক বা প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ পাওয়ক যায় তাহাকে বলা হয় সমস্ত পদ বা সমাসযুক্ত পদ। যেমন- পা-গাড়ি, বর্ষব্যাপী, উনুন-মুখো প্রভৃতি। 

(চ) অর্থসূলক বিভাগ =
শব্দ: যৌগিক, রূঢ়, যোগরূঢ়

(ক) যৌগিক শব্দ : প্রকৃতি প্রত্যয় হইতে যে সকল শব্দের অর্থ বোঝা যায় অর্থাৎ শব্দটি যখন তাহার প্রকৃত অর্থকেই প্রকাশ করে, তখন তাহাকে যৌগিক শব্দ বলে। যথা, দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি (দশরথের পুত্র) বেগুন + ই = বেগুনি (বেগুনের মত রঙ্‌)।

(খ) রূঢ় বা রূটি শব্দঃ প্রকৃতি প্রত্যয় অনুসারে অর্থ না বুঝাইয়া যে শব্দ অন্য কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তাহাকে রূঢ় বা রাঢ়ি শব্দ বলে। যথাং কুশল শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় নিষ্পন্ন অর্থ যে কুশ তুলিতে পারে। কিন্তু ইহা নিপুণ অর্থে ব্যবহার হয়। মণ্ডপ অর্থ মণ্ড পানকারী হইলেও তাহা গৃহকেই বুঝাইয়া থাকে। সন্দেশ (মূল অর্থ সংবাদ) প্রচলিত অর্থ মিষ্ট দ্রব্য বিশেষ।

(গ) যোগরুঢ় : প্রকৃতি প্রত্যয় অনুসারে অনেক অর্থ হইলেও যে শব্দ তাহার মধ্যে মাত্র একটি
বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাহাকে যোগরুঢ় শব্দ বলা হয়। যথা, পঙ্কজ (পঙ্ক + জন্‌ + ড) অর্থাৎ যাহা কিছু পক্ষে জন্মে অর্থাৎ শ্যাওলা, শালুক, পদ্ম ইত্যাদি। কিন্তু ইহা দ্বারা কেবলমাত্র পদ্মকেই বুঝায়। মনসিজ শব্দের অর্থ যাহা কিছুমান জন্মায়। কিন্তু ইহারদ্বারা কেবলমাত্র কামদেবকেই বুঝায় পীতাম্বর
শব্দের দ্বারা যে কোনও পীতবস্ত্রধারীকে না বুঝাইয়া কেবলমাত্র কৃষ্ণকেই বুঝাইয়া থাকে।

আরোও পড়ুন

সাধু ও চলিত ভাষা

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn more
Ok, Go it!